সূচিপত্র
আল্লামা আযহার আলী আনোয়ার শাহ রহমতুল্লাহি আলায়হি একটি আলোকিত নাম, প্রভাবক ব্যক্তিত্ব। সবার কাছে যিনি পরিচিত ছিলেন। 'শাহ সাহেব হুজুর' বলে। তিনি ছিলেন উপমহাদেশের ইসলামি রাজনীতির মহাপুরুষ মুজাহিদে মিল্লাত আল্লামা আতহার আলী রহমতুল্লাহি আলায়হি'র বড় সাহেবজাদা আদর্শ পিতার আদর্শ সন্তান। পিতার মতো কর্মবহুল ছিল তাঁর জীবন।
অপার কীর্তিময়তায় বিপুল কর্মযজ্ঞ সফলভাবে আঞ্জাম দিয়েছেন তিনি। দেখতে ছিলেন। অনন্যসাধারণ একজন মানুষ। স্বল্পভাষী, গুরুগম্ভীর ব্যক্তিত্বসম্পন্ন; সময়ে সময়ে প্রাণবন্ত। গুণ ও প্রজ্ঞার দৃষ্টান্তে সমকালীন আলেম নক্ষত্রগণের মধ্যে তিনি ছিলেন ভরা- -পূর্ণিমার চাঁদের মতো প্রোজ্জ্বল।
আযহার আলী আনোয়ার শাহ রহ: এর জীবনী
প্রশ্ন | উত্তর |
---|---|
নাম | আযহার আলী আনোয়ার শাহ |
পিতা | আল্লামা আতহার আলী |
মাতা | মোসাম্মৎ আজিজুন্নেসা |
সন্তান | ২ পুত্র ও কন্যা সন্তান |
ভাই বোন | ৫ ভাই ও ৩ বোন |
জন্ম | ৮ই সফর ১৩৬৭ হিজরি মোতাবেক ২রা জানুয়ারি ১৯৪৭ খ্রি। |
মৃত্যু | ৩রা জমাদিউস সানি ১৪৪১ হিজরি মোতাবেক ২৯ জানুয়ারি ২০২০ খ্রি। |
স্ত্রি | মোসাম্মৎ মিনারা বেগম |
শৈশবকাল
তাঁর জন্ম ৮ই সফর ১৩৬৭ হিজরি মোতাবেক ২রা জানুয়ারি ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে বৃহস্পতিবার সকাল ১০ ঘটিকায় কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শহীদি মসজিদ-সংলগ্ন বাসায় তাঁর। পিতা মুজাহিদে মিল্লাত আল্লামা আতহার আলী রহমতুল্লাহি আলায়হি, মাতা মোসাম্মৎ আজিজুন্নেসা। তাঁরা ৫ ভাই ও ৩ বোন। এক ভাই শৈশবে মৃত্যুবরণ করেন। বর্তমানে তাঁদের ২ ভাই ও ৩ বোন জীবিত আছেন।
শিক্ষাজীবন
প্রাথমিক শিক্ষা : বাবার কাছেই পড়ালেখার হাতেখড়ি। অতঃপর বাবার বিশিষ্ট খলিফা কারি মাওলানা নিসার আলি রহমতুল্লাহি আলায়হি'র নিকট কুরআন শরিফের নাজেরা ও তাজবিদ শিক্ষাগ্রহণ করেন।
বাংলা, ইংরেজি প্রভৃতি বিষয়ে পাঠ নেন সুপণ্ডিত মাস্টার আবদুর রশিদ রহমতুল্লাহি আলায়হি'র নিকট। ১৯৬০-৬১ সালে জামিয়া ইমদাদিয়ায় হাফেজ মাওলানা নুরুল ইসলাম রহমতুল্লাহি আলায়হি'র তত্ত্বাবধানে দেড় বছরে হিফজ সম্পন্ন করেন।
মাধ্যমিক শিক্ষা :
ইসলাম বিষয়ে একজন দক্ষ আলেম, বহুগ্রন্থপ্রণেতা মাওলানা সাইয়িদ আবদুল আহাদ কাসেমি রহমতুল্লাহি আলায়হি'র নিকট তাঁর মাধ্যমিক শিক্ষা অর্জিত হয়। মাওলানা আবদুল আহাদ কাসেমির আন্তরিক সুহবত ও সুনিপুণ নেগরানিতে ১৯৬২-৬৪ সালে জামিয়া ইমদাদিয়ায় পড়ালেখা করেন।
প্রখর মেধা ও বিস্ময়কর প্রতিভার অধিকারী হওয়ায় একবছরে একাধিক জামাত শেষ করতে সক্ষম হন। মাওলানা আবদুল হক জালালাবাদী, শায়খুল হাদিস মাওলানা আশরাফ আলি রহমতুল্লাহি আলায়হি ও মুফতি নুরুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলায়হি ছিলেন তাঁর এ সময়কার উসতাদ।
উচ্চশিক্ষা :
বাবার নির্দেশে ১৯৬৪ সালে পাকিস্তানের করাচিতে পাড়ি জমান, সেখানকার বিখ্যাত বিদ্যাপীঠ জামিয়া আরাবিয়া ইসলামিয়া নিউটাউনে ভর্তি হন।
তাফসির, হাদিস, ফিকাহ প্রভৃতি বিষয়ে বিশেষ পারদর্শিতা এবং পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। ১৯৬৭ সালে বেফাকুল মাদারিস পাকিস্তানের অধীনে গৃহীত দাওরায়ে হাদিসের কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। তাঁর হাদিসের উসতাদ ছিলেন যুগশ্রেষ্ঠ ইলমি মনীষা এবং আন্তর্জাতিক ইসলামিক ব্যক্তিত্বগণ আল্লামা সাইয়িদ ইউসুফ বিন্নুরি রহমতুল্লাহি আলায়হি, আল্লামা ওয়ালি হাসান টুংকি রহমতুল্লাহি আলায়হি, আল্লামা ইদরিস মিরাঠি রহমতুল্লাহি আলায়হি ও আল্লামা ফজলে মুহাম্মদ মিসবাহুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলায়হি।
ইলমুত তাফসিরে তাঁর উসতাদ ছিলেন আল্লামা আবদুল্লাহ দরখাস্ত রহমতুল্লাহি আলায়হি যিনি ছিলেন হাফিজুল হাদিস এবং তাঁর হাদিসেরও উসতাদ। উল্লেখ্য- জামিয়া নিউটাউনে আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রেরিত ৪ জন খ্যাতিমান উসতাদের কাছে তিনি আরবি সাহিত্য ও তাজবিদুল কুরআন শিক্ষা লাভ করেন । ইলমূল কিরাতে তাঁর উসতাদ ছিলেন- কারি আতা সোলায়মান রিজক আল মিসরি রহমতুল্লাহি আলায়হি ও উসতাদ ইবরাহিম আবদুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলায়হি।
এছাড়া শায়খ আহমদ ওয়ারদা রহমতুল্লাহি আলায়হি, শায়খ আবুল ফুতুহ আলী রহমতুল্লাহি আলায়হি ও শায়খ আল মুশাহিদ রহমতুল্লাহি আলায়হি-এর মতো আন্তর্জাতিক ইসলামিক স্কলারগণের কাছ থেকে তিনি গ্রহণ করেছেন বিভিন্ন শাস্ত্রীয় পাঠ।
কর্মজীবন
শিক্ষা সমাপণের পরপর তিনি কর্মজীবনে আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৬৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শহীদি মসজিদের সহকারী ইমাম এবং জামিয়া ইমদাদিয়ার সিনিয়র মুদাররিস হিসেবে যোগদান করেন। স্বাধীনতাউত্তর দুর্যোগকালে জামিয়া ইমদাদিয়া বন্ধ হয়ে গেলে তাঁর অধ্যাপনা বন্ধ থাকে।
এ সময় তিনি নববি সুন্নত হিসেবে কিছুদিন কাপড়ের ব্যবসা চালিয়ে যান। ১৯৭৫-৭৬ সালে জামিয়া ইসলামিয়া মোমেনশাহীতে অত্যন্ত সুনামের সাথে সিনিয়র মুহাদ্দিস ও নাজেমে
তালিমাতের (শিক্ষাসচিব) দায়িত্ব পালন করেন। সুনানে আবু দাউদ, সহিহ মুসলিম, হেদায়া রাবে প্রভৃতি কিতাবাদি অধ্যাপনা করেন। তাঁর শিক্ষাদান পদ্ধতি ছিল অত্যন্ত চমৎকার এবং আকর্ষণীয়। অতি জটিল ও সুকঠিন বিষয়কে ছাত্রদের সামনে পানির মতো তরল ও সহজ করে উপস্থাপন করতেন। তাঁর অসীম আত্মত্যাগ এবং বিশেষ প্রচেষ্টায় দুর্যোগউত্তর জামিয়া ইমদাদিয়া পুনরুদ্ধার হয়। তখন ১৩-১২-১৯৭৭ সালে তিনি জামিয়া সিনিয়র মুহাদ্দিস হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। সহিহ বুখারি, জামে তিরমিজি প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ। কিতাবাদি পাঠদান করেন। ৫-৩-১৯৭৯ সালে তিনি জামিয়ার ভাইস প্রিন্সিপাল নিযুক্ত হন।
প্রিন্সিপাল মাওলানা আহমদ আলী খাঁ রহমতুল্লাহি আলায়হি স্বাস্থ্যগত কারণে দায়িত্ব পালনে অক্ষমতা প্রকাশ করলে মজলিসে শুরার। পরামর্শক্রমে তিনি এই দায়িত্ব গ্রহণ করেন। অতঃপর ১-১-১৯৮৩ সালে তিনি জামিয়া প্রিন্সিপাল পদে উন্নীত হন এবং অত্যন্ত সুনাম, দক্ষতা ও কৃতিত্বের সঙ্গে আমৃত্যু এ পদে বহাল থাকেন। জামিয়া ইমদাদিয়ার মহাপরিচালকের পাশাপাশি তিনি ছিলেন। শহীদি মসজিদের খতিन
মোতাওয়ারি সেইসঙ্গে অনেক মাদরাসার বিশিষ্ট মুরুব্বি এবং ভারপ্রাপ্ত পরিচালক। তিনি ছিলেন বেফাকুল মাদারিস কওমিয়ার সিনিয়র সহসভাপতি, হাইয়াতুল উলইয়ার মাননীয় সদস্য তানযিমুল মাদারিস কওমিয়ার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, কিশোরগঞ্জ ইমাম-উলামা পরিষদের সভাপতি, কিশোরগঞ্জ দাওয়াতুল হক-এর সভাপতি এবং আল আতহার সাহিত্য পাঠাগারের পৃষ্ঠপোষক।
প্রাতিষ্ঠানিক ও সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন ছাড়াও তিনি অসংখ্য দীনি ও সামাজিক কর্মকাণ্ড সফলভাবে আঞ্জাম দিয়েছেন এবং আর্থিক সহায়তা ও সাংস্কৃতিক পৃষ্ঠপোষকতা দান করেছেন। পিতা আল্লামা আতহার আলী রহমতুল্লাহি আলায়হি-এর মতো এক কর্মবহুল জীবন তিনি পার করে গেছেন।
আধ্যাত্মিক সাধনা
তাঁর পিতা মরহুম ছিলেন আধ্যাত্মিকতার ময়দানে একজন সিদ্ধপুরুষ। পিতার এই প্রভাব তাঁকেও প্রভাবান্বিত করেছিল। এক মহাজীবনের ব্রত নিয়ে তিনি বাইয়াত হয়েছিলেন হাকিমুল উম্মত আল্লামা আশরাফ আলী থানভি রহমতুল্লাহি আলায়হি-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা শাহ আবরারুল হক হারদুই রহমতুল্লাহি আলায়হি-এর হাতে।
দীর্ঘ মুজাহাদার পর ২০০৪ সালে তিনি তাঁর খেলাফত লাভে ধন্য হন। এ ছাড়া আরো ৪ জন আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্বের কাছ থেকে তিনি খেলাফত লাভ করেন। তাঁরা হলেন- আল্লামা জাফর আহমদ উসমানি রহমতুল্লাহি আলায়হি-এর খলিফা মাওলানা শামসুল হক খাজা রহমতুল্লাহি আলায়হি: আল্লামা আতহার আলী রহমতুল্লাহি আলায়হি-এর খলিফা মাওলানা আবদুল মান্নান সিলেটী রহমতুল্লাহি আলায়হি মাওলানা আবদুল ওয়াহহাব পীরজী রহমতুল্লাহি আলায়হি-এর খলিফা মাওলানা ফজুর রহমান রহমতুল্লাহি আলায়হি: মাওলানা সাইয়িদ আসআদ মাদানি রহমতুল্লাহি আলায়হি-এর খলিফা মাওলানা এহসানুল হক সন্দ্বীপি রহমতুল্লাহি আলায়হি।
পিতার অনুকরণে তিনি খানকাহি তাজকিয়াতে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। জামিয়া ইমদাদিয়ায় খানকাহে আতহারিয়া প্রতিষ্ঠা করে এখান থেকে করে গেছেন আত্মশুদ্ধির প্রচার।
বৈবাহিক জীবন
১৯৬৮ সালের ৯ই ফেব্রুয়ারি কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলি থানার মরহুম শামসুন্দোহা চৌধুরীর ৩য় কন্যা মোসাম্মৎ মিনারা বেগম-এর সাথে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বৈবাহিক জীবনে তিনি ২ পুত্র ও কন্যা সন্তানের জনক। এক কন্যা শৈশবে মৃত্যুবরণ করেন।
রাজনীতি
তাঁর পিতা মরহুম ছিলেন বাংলার ইসলামি রাজনীতির মহাপুরুষ। জীবনের একটা বিশাল অংশ তিনি রাজনীতির ময়দানে ব্যয় করে গেছেন। কিন্তু শেষবেলায় প্রিয়পুত্রকে অসিয়ত করে যান বেটা, আমার অসিয়ত তুমি কখনো রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করবে না। কারণ আমি রাজনীতিতে জড়িত হয়ে অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতার অধিকারী হয়েছি।
এখানে নিজের লোকেরাই গাদ্দারি ও বিশ্বাসঘাতকতা করে। পিতার এই অসিয়ত মেনে তিনি কখনো প্রচলিত দলীয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেননি, তবে ইসলামি রাজনীতির মূলধারা। থেকে একদম দূরে সরে যাননি। ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর ওপর যখন কোনো আঘাত এসেছে, তিনি প্রতিবাদে সরব হয়ে উঠেছেন। দেশ ও জাতির ক্রান্তিকালে বয়ান ও খুতবার মাধ্যমে অমূল্য নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
ইসলামি রাজনীতির জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে তাঁর অবস্থান ছিল ঐক্যবদ্ধ, কিন্তু উচ্চারণ ছিল স্বতন্ত্র।
অবদান
কর্মজীবনের প্রতিটি পর্যায়ে তিনি রেখে গেছেন অনন্য অবদানের ছাপ। তাঁর প্রিন্দিপাল জীবনে জামিয়া ইমদাদিয়া সাফল্যের শিখর স্পর্শ করেছে। ছাত্র-শিক্ষকদের সার্বিক সুযোগ-সুবিধা, পড়ালেখার মান ও গুণগত অগ্রসরতা, শিক্ষাব্যবস্থায় মেধাপোযোগী পাঠ্যপুস্তক চয়ন, আধুনিক ব্যবস্থাপনার সমন্বয় এবং আয়-উন্নতির নিজস্বতায় এই জামিয়া বাংলাদেশের মাদরাসাগুলোর জন্য হতে পারে আদর্শের মাইল ফলক। শহীদি মসজিদের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে তাঁর প্রচেষ্টা অতুলনীয়।
মসজিদের উন্নতি প্রকল্পে একে ১০ তলা ইমারত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন, যা বাস্তবায়নের পথে। কিশোরগঞ্জবাসীকে সর্বাধুনিক মার্কেটিং পরিষেবা প্রদানে নিয়েছিলেন আল্লামা আতহার আলী রহমতুল্লাহি আলায়হি টাওয়ার-এর উদ্যোগ, সেটাও বাস্তবায়নের পথে। তিনি ছিলেন মাদারিসে কওমিয়ার একজন দরদি অভিভাবক। কওমি অঙ্গনের জাতীয় পর্যায়ে তাঁর অবদান ও পদক্ষেপ চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। বেফাকুল মাদারিসের আজীবন সহসভাপতি হিসেবে একে দিয়েছেন সার্বিক সমৃদ্ধি।
বিশেষত বেফাকের সুষ্ঠু পরিচালনার নির্দেশনায় তাঁর পরামর্শ ও উচ্চারণগুলো ছিল সময়োচিত এবং স্পষ্টতর। হাইয়াতুল উলিয়া প্রতিষ্ঠা এবং এর গঠনতত্ত্ব প্রদানে তাঁর ভূমিকা অপরিসীম। কওমিসনদের সরকারি স্বীকৃতিকরণে তিনি। ছিলেন অন্যতম উদ্যোক্তা। তিনি ছিলেন।
বৃহত্তর মোমেনশাহীর আঞ্চলিক শিক্ষাবোর্ড তানযিমুল মাদারিসের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। সফল নেতৃত্ব ও দক্ষ পরিচালনায় এর অনেক উন্নতি করেছেন। একে বানিয়েছেন সকলের আস্থার প্রতীক। দেশের অন্য আঞ্চলিক শিক্ষাবোর্ডগুলোর জন্য তানযিমুল মাদারিসও হতে পারে আদর্শের মাইল ফলক।
দাওয়াতের ময়দানে তিনি ছিলেন একজন দরদি নাই এ মুসলিহ মুরুব্বি। তাবলিগের সার্বিক কার্যক্রমে তাঁর অংশগ্রহণ ছিল সক্রিয় ও সরব। সম্প্রতি উদ্ভূত তাবলিগের ভেতরকার সংকট নিরসনে তাঁর অবদান ও নির্দেশনা ছিল অত্যন্ত অমায়িক এবং গুরুত্বপূর্ণ।
অনন্য প্রতিভা
আল্লাহ তায়ালা তাঁকে দান করেছিলেন এক অনন্যসাধারণ প্রতিভা। তিনি ছিলেন পাণ্ডিত্যমণ্ডিত, গুরুগম্ভীর ব্যক্তিত্বসম্পন্ন লোক। চেনা-অচেনা সকলের কাছে যাঁকে দূর থেকে দেখলে ভয় ভয় লাগত আর কাছে গেলে মনে হতো মখমলের মতো নরম, খুবই দিলখোলা আর প্রাণবন্ত একজন মানুষ। পিতার মতো তিনি ছিলেন অনেক গুণের অধিকারী।
প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় বুদ্ধিদীপ্ত পরিচালক দরসের মসনদে আদর্শ উসতাদ, তরবিয়তের মজলিসে তালিমি মুরুব্বি, নেতৃত্বদানে সফল অধিনায়ক এবং সিদ্ধামহণে বাস্তবানুগ। তাঁর একটা বড় বৈশিষ্ট্য হলো, তিনি ছিলেন একজন বরেণ্য ওয়ায়েজ ও বিদগ্ধ আলোচক। তাঁর বয়ান ও খুতবা ছিল অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী ।।
মধুর কন্ঠস্বর, অনুপম বাচনভঙ্গি, যথাযথ শব্দচয়ন, মুগ্ধকর উপস্থাপনা এবং স্থানকালপাত্র ভেদে কথা বলার বিশেষ যোগ্যতায় তিনি ছিলেন সমৃদ্ধ। ভক্তকুলের ভাষায় তিনি ছিলেন একজন কুরআন পাগল বুড়ো। তাঁর আকর্ষণীয় কুরআন তেলাওয়াত, বিমোহিত করত শত শত মানুষের মন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও বিস্তৃত ছিল তাঁর ইলমি মনীষার প্রসার।
রচনাবলি
তাঁর নিজস্ব রচনা
- কিছু বিক্ষিপ্ত কথা
- খুতবাতে শায়খ আনোয়ার শাহ
তাঁর তত্ত্বাবধান ও মালিকানায় প্রকাশিত গ্রন্থাদি :
- হায়াতে আতহার
- আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়া কিশোরগঞ্জ : ইতিহাস ঐতিহ্য অবদান
- স্মৃতির আয়নায় দেখা প্রিয়মুখ
তথাকথিত আহলে হাদিস ফিতনার জবাব সমকালীন সমস্যাবলির শরয়ি সমাধান এ ছাড়াও তাঁর বয়ানসমগ্র, চিঠিপত্র ও সাক্ষাৎকার-সংকলন, আত্মজৈবনিক রচনাদি এবং বিশাল কলেবরে স্মারকগ্রন্থ প্রকাশের কাজ চলমান—যা জামিয়া ইমদাদিয়ার প্রকাশনা বিভাগকর্তৃক প্রকাশিতব্য ।
তিনি দুবার হজ পালন করেছেন। প্রথমবার ১৯৭৬ সালে, দ্বিতীয়বার ২০০০ সালে। ১৯৮১ সালে স্টাডি ট্যুর হিসেবে মালেশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও সিঙ্গাপুর সফর করেছেন। ১৯৮৭ সালে ইরাকের তখনকার ধর্মমন্ত্রীর দাওয়াতে সফর করেছেন ইরাক। ১৯৯৪ সালে ভারত, ২০০০ সালে আরব-আমিরাত, এবং ২০০৩ সালে পাকিস্তান সফর করেছেন। ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে চিকিৎসার জন্য তিনি থাইল্যান্ড গিয়েছিলেন।
ইন্তেকাল
৩রা জমাদিউস সানি ১৪৪১ হিজরি মোতাবেক ২৯ জানুয়ারি ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে বুধবার বিকেল ৫ ঘটিকায় ৭৩ বছর বয়সে ঢাকার ইবনে সিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এই কিংবদন্তি আলেম, মহিরুহ মুরব্বি এক মহাজীবনের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে রফিকে আলার সান্নিধ্যে চিরপ্রস্থান করেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন। পরদিন বাদ জোহর কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহে এক অভূতপূর্ব জনসমাগমে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
জানাজা পড়ান ছোট ছেলে মাওলানা আনজার শাহ তানিম। শোলাকিয়াস্থ বাগে জান্নাত-সংলগ্ন পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে সমাহিত করা হয়। হজরতের ইন্তেকালের পর তাঁর কনিষ্ঠ ভাই মাওলানা শাব্বির আহমদ রশিদ দা. বা. জামিয়া ইমদাদিয়ার মহাপরিচালক, শহীদি মসজিদের মোতাওয়াল্লি, বেফাকুল মাদারিসের সহসভাপতি, তানযিমুল মাদারিসের সভাপতি এবং আল্লামা আযহার আলী আনোয়ার শাহ রহমতুল্লাহি আলায়হি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
আল্লামা আযহার আলী আনোয়ার শাহ রহমতুল্লাহি আলায়হি ছিলেন মহাকাল থেকে ছুটে আসা এক উজ্জ্বল নক্ষত্র-যিনি তাঁর ব্যক্তিত্বের ঝলকানিতে আমাদের মনোজগৎ শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার অবিরাম বর্ষণে ভরপুর করে আবারো ফিরে গেছেন মহাকালে...!
Rate This Article
Thanks for reading: আল্লামা আযহার আলী আনোয়ার শাহ রহ: এর জীবনী। , Sorry, my English is bad:)