অটোমান সাম্রাজ্য ধ্বংসের কারণ। উসমানী সাম্রাজ্যের উত্থান ও পতন। Alfamito Blog

অটোমান সাম্রাজ্য ধ্বংসের কারণ। উসমানী সাম্রাজ্যের উত্থান ও পতন। Alfamito Blog
Alfamito Blog
সূচিপত্র

উনবিংশ শতাব্দীর শুরুর কথা, ওসমানী সালতানাতের বিলুপ্তির মাধ্যমে ইসলামী খেলাফতের ছায়া অন্ধকারে মিলে গেছে। মুসলিম জাতির উপর ছেয়ে গেছে জাতীয়তাবাদের সংক্রামণ। ইসলামী খেলাফতের সুদীর্ঘ সাড়ে ১৩শো বছরে খেলাফতের সূর্য বিভিন্নরূপ নিয়েছে।

 কখনো উমর ইবনে খাত্তাবের সুদক্ষ শাসনকার্য কিংবা উমাবী সিপাহসালার তারেক বিন জিয়াদের স্পেন বিজয় খেলাফতকে করেছে সমৃদ্ধ। আবার কখনো মঙ্গলঝড়ে আব্বাসী খেলাফতের রাজধানী বাগদাদ পরিণত হয়েছে মৃত্যুপুরীতে।কখনো বা কন্সটান্টিনোপাল বিজেতা মোহাম্মদ আল-ফাতিহ এর রণকৌশল বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য কে করেছে হতভম্ব।

অটোমান সাম্রাজ্য ধ্বংসের কারণ

কিন্তু ১৮ শতকের এনলাইটমেন্ট-এর বিকাশ এবং ফরাসি বিপ্লবের ঢেউ লাগে উসমানী খেলাফতে, শুরু হয় খেলাফত সংস্কার। আধুনিকতার নামে কবরস্থ হয় গৌরবময় ওসমানী সালতানাত। ফলে মুসলিমজাতি আজ ৯৯ বছর পর্যন্ত খেলাফত ব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত।

অটোমান সাম্রাজ্য ধ্বংসের কারণ

দ্বাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে আনতুলিয়ার এক তুর্কি বসতিতে সূচনা ঘটে এক নব-জাগরণের। ধ্বনিত হয় এক শক্তির আওয়াজ। ধীরে ধীরে তাদের গোত্রীয় শক্তি পরিণত হয় নেতৃত্বের শক্তিতে। তৈরি হতে থাকে খেলাফতের পটভূমি। রচিত হয় ইসলামী খেলাফতের সর্বশেষ অধ্যায়। এর্তুগ্রুল গাজীর পুত্র ওসমান গাজীর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠা লাভ করে উসমানী সাম্রাজ্য। ১২৮৮ তে প্রতিষ্ঠা পাওয়া উসমানী সালতানাত একে একে জয় করতে থাকে দেশের পর দেশ। মুসলিম উম্মাহ তার আশ্রয় ও কেন্দ্রস্থল ফিরে পায়। উন্নতি ও অগ্রগতির সুবাতাস বইতে থাকে সর্বত্র।

 সাড়ে ছয়শত বছরের দীর্ঘ এই সালতানাত ইতিহাসে ইসলামি খেলাফতের মানচিত্রকে বিশ্বের দরবারে উপস্থাপন করে নতুন আঙ্গিকে। রাজনৈতিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় আপন গতিতে চলতে থাকে খেলাফত ব্যবস্থা। এভাবে ১৫৫৬ পর্যন্ত ওসমানী খেলাফত তার স্বাতন্ত্র বজায় রেখে স্বকীয় ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়। ফলে মনে করা হয় এই সময়টিতে সালতানাত তার ইতিহাস ঐতিহ্য ও প্রভাব প্রতিপত্রসহ সকল দিক দিয়ে জৌলুশপূর্ণ ছিল।

তবে সকল ইতিহাসবিদ এ ব্যাপারে একমত যে ১৫৬৬ খ্রিস্টাব্দে সুলতান সুলাইমান কানুনির ইন্তেকালের সঙ্গে সঙ্গে ওসমানী খেলাফতের সূর্য অস্তাচলের পথ ধরে। দক্ষ শাসকের অভাবে সামরিক শক্তিতে দুর্বল হতে থাকে একদিকে, অন্যদিকে হতে থাকে নৈতিক প্রদস্খলন। রাজ্য পরিচালনায় অমনোযোগ এবং দুনিয়া মুখিতার দরুন ওসমানী খেলাফত হারাতে থাকে স্বীয় প্রভাব-প্রতিপত্তি। মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে বিভিন্ন ফিতনা এবং বিদ্রোহ। ফলে হাতছাড়া হতে থাকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্য। মুখ থুবড়ে পড়ে খেলাফতে উসমানিয়ার বিজয় রথ। 

অর্থনৈতিক, সামরিক, শিক্ষা, আধুনিক সমরাস্ত্র ও রণকৌশল সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের জ্ঞানহীনতা খেলাফতের মত মহান শাসন ব্যবস্থাকে করে প্রশ্নবিদ্ধ। এই সময় চারদিকে ফরাসি বিপ্লব আর পশ্চিমা সভ্যতার উন্নয়নের মহাকাল চলছিল। খেলাফত অঞ্চলের মানুষকে এ বিপ্লব গভীরভাবে প্রভাবিত করে। মানুষ খেলাফত সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে ফলে শুরু হয় "খেলাফত সংস্কার আন্দোলন"।

খেলাফত সংস্কার আন্দোলন ও তার ফলাফল:

১৮ শতকের মাঝামাঝি সময়ে পাশ্চাত্য জ্ঞানের মূল স্তম্ভ হিসেবে পরিচিত এনলাইটমেন্ট-এর বিকাশ এবং সেইসাথে ফরাসি বিপ্লবের ঢেউ লাগে উসমানী খেলাফতে। উনিশ শতকে এসে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের ছোঁয়ায় ইউরোপ বদলে যেতে শুরু করে পুর্ণমাত্রায়। কিন্তু উন্নতির এ মহাকালে উসমানী সম্রাজ্য এক ঐতিহাসিক ক্লান্তিকাল অতিক্রম করেছিল। প্রশাসনিক কাঠামো এবং অর্থনৈতিক শক্তি ছিল একদম শূন্যের কোঠায় ফলে খেলাফত সংস্কার ছিল অপরিহার্য। শুরু হয় খেলাফত সংস্কার আন্দোলন যা ইতিহাসে তানজিমাত নামে পরিচিত।

১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে সুলতান তৃতীয় সেলিমের শাসনামলে ইউরোপীয় চর্চার চূড়ান্ত সূচনা হয়। বহু ইউরোপীয় গ্রন্থ তুর্কি ভাষায় অনুবাদ হয়। উচ্চশিক্ষার জন্য তরুণদের ব্যাপকভাবে ইউরোপে পাঠানো হয়। এবং সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদের সময়ে অর্থনৈতিক সংস্কারের নামে পুঁজিবাদী অর্থনীতি পরিচালিত হয় কিন্তু যোগ্য লোকের অভাবে পুঁজিবাদী অর্থ ব্যবস্থা বিফল হয় এবং রাষ্ট্র বিদেশী ঋণের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। ফলে সংস্কার আন্দোলন সফলতা থেকে দূরে ছিটকে পড়ে। তবে ইতিহাস এ কথা বলতে বাধ্য যে এই তানজিমাত ওসমানী খেলাফত বিলুপ্তির পথকে সহজ করে দিয়েছে। কেননা এই সংস্কারের প্রধান লক্ষ্যই ছিল জনমনে আধুনিকতা কিংবা উদারনীতির প্রয়োগ।

কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রোগ্রেস:

তানজিমাতের কারনে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শিক্ষাগ্রহণ করার ফলে তরুণদের চিন্তাধারাও ইউরোপীয় সংস্কৃতির আদলে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। ফলে ওসমানী খেলাফতের মূল ভূখণ্ড তুরস্ককে ইউরোপের দাচে গঠন করার লক্ষ্যে নামিক কামালের নেতৃত্বে ১৮৬১ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে "ইয়াং তুর্কস্ মুভমেন্ট" বা "তরুণ তুর্কি আন্দোলন"। এই সংগঠনের মূল লক্ষ্যই ছিল খেলাফত বিরোধী জনমত তৈরি করা কিন্তু সুলতান আব্দুল হামিদের শাসন আমলে তাদের এই তৎপরতা চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হয়। 

তুরস্ক থেকে বিতাড়িত হয়ে তারা আশ্রয় নেয় প্যারিসে। এমনিভাবে ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে ইস্তাম্বুলের আর্মি মেডিকেলের ছাত্রদের সমন্বয়ে "ইতিহাদুল ওসমানী" বা "জামিয়াতুল ইত্তেহাদ" নামে আরেকটি সংগঠন গড়ে ওঠে। সংগঠনটি গড়ে তুলেছিল ইতালির ফ্রীম্যাসন সংগঠন দ্বারা মারাত্মকভাবে প্রভাবিত রোমানিয়ান ইব্রাহিম তিমু। এই বিপ্লবের উদ্দেশ্য ছিল সুলতান কে ক্ষমতা থেকে অপসারণ এবং পশ্চিমা দেশসমূহের আদলে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন।

পরবর্তীতে ১৯০৬ সালে ফ্রিম্যাসান এবং জায়নবাদীদের সহযোগিতায় তরুণ তুর্কি আন্দোলন এবং জামিয়াতুল ইত্তেহাদ এর যৌথ পরিকল্পনায় গঠিত হয় "কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রোগ্রেস" বা "ইতিহাদ মে তেরাক্কি জেমিয়েতি" একটি ধর্মনিরপেক্ষ পশ্চিমা দাঁতের তুরস্ক গঠনের লক্ষ্যে নিজেদেরকে দাঁড় করাতে পারে খুব সহজেই। তারা জনসাধারণকে এক প্লাটফর্মে একত্রিত করার লক্ষ্যে তুরানি বাপ ধরার উপর অধিক জোর দেয়। "তুরান" শব্দটি মূলত তুর্কিদের মূল জন্মস্থানের দিকে ইঙ্গিতবাহি। 

তারা তুর্ক বলতে কেবল সাইবেরিয়া, তুর্কিস্তান, চীন, পারস্য, ককেশাস, আনাতুলিয়া ও রাশিয়ার অধ্যষিত তুর্কিদেরই বুঝাতো না, বরং পৃথিবীর সব অঞ্চলের বসবাসরত তুর্কিদের তাদের জাতীয়তার মধ্যে গণ্য করত। আর এই বৃহত্তর ঐক্যের নাম দেওয়া হয় "তুরানি ঐক্য"।

লোকদেরকে ইসলামি ভাবধারা থেকে দূরে সরিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতাকে মজবুত করার জন্য তুরানি মতাদর্শকে সামনে নিয়ে আসাটা কমিটি অব ইউনিয়ন এ্যান্ড প্রোগ্রেসের একটি কার্যকরি পদক্ষেপ ছিল।

সালতানাত ও খেলাফাত বিলুপ্তি;

১৯১৪ - ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তুরস্ক জার্মানি ও অস্ট্রিয়ার সঙ্গ দেয়। এদিকে ইংরেজরা "হুসাইন ম্যাকমাহন" চুক্তির মাধ্যমে আরবদের ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং রাশিয়ান জোটে অন্তর্ভুক্ত করে নেয়। ফলে আরবরা তুর্কিদের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। এবং তুর্কিরা যুদ্ধে পরাজিত হয়। যুদ্ধ পরাজয়ের পর প্রতিপক্ষের মিত্র রাষ্ট্রগুলো তাদের বেশিরভাগ অঞ্চল দখল করে নেয়। আর ইংরেজরা এথেন্স দখল করে নিয়ে খলিফাকে কার্যত বন্দিতে পরিণত করে।

এভাবে কমিটি অব ইউনিয়ন এ্যান্ড প্রোগ্রেস খেলাফত বিরোধী আন্দোলনে অনেকটা অগ্রগামী হয়ে যায়। এবার কেবল প্রয়োজন ছিল হতাশার অতল গহ্বরে পড়ে কাতরানো মুসলিম সমাজ থেকে এমন একজন কৃত্রিম বীরকে সামনে নিয়ে আসা হবে, যার মেকি বীরত্বের সামনে ইউরোপের মিত্রবাহিনী লেজ গুটিয়ে পালাবে। তাকে এমন নাটকীয় ভাবে সামনে আনো হবে যে, সহজেই সে এই হতাশ জাতির মন জয় করতে পারে এবং তুর্কিরা নিজেদের মুক্তিদাতা মনে করে। আর এই কাজের জন্য ইংরেজদের গোয়েন্দা বিভাগ "মুস্তফা কামাল পাশা" নামের এক সামরিক নেতাকে খুঁজে বের করতে সক্ষম হয়।

মিত্রবাহিনী এবং সে সকল গ্রিক যারা ১৩৩৮ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটেনের সাহায্যে ইজমির দখল করে নিয়েছিল এবং যারা আনাতোলিয় উপদ্বীপে দাফন হওয়া ক্রুসেডীয় বিদ্বেষকে জাগিয়ে তুলেছিল। মুস্তফা কামাল তাদের মুক্তিদূত হিসাবে আবির্ভূত হয়।

মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক

কুরআনুল কারীম হাতে নিয়ে গ্রিকদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লে পলায়নের নাট্যমঞ্চস্থ হয়। মিত্রবাহিনী পূর্ব পরিকল্পনামতে কোনো অস্ত্র ব্যাবহার ছাড়াই তার সামনে থেকে পালিয়ে যেতে থাকে। এর ফলে মুস্তফা কামাল পাশা ধীরে ধীরে পদপ্রদীপে আসতে থাকে, এবং অসাধারণ বীরত্বের নৈপুন্যের কারণে তুরস্কের মানুষের মন-মগজে জনপ্রিয় নেতা হিসেবে পরিচিত হন। জনপ্রিয়তার দাবি অনুসারে "জাতির পিতা" বা "আতাতুর্ক" উপাধিতে ভূষিত হন কামাল পাশা। তুর্কি ভাষায় 'আতা' মানে জনক বা পিতা তুর্ক তো তুরস্ক অর্থাৎ তুরস্ক জাতির জনক।

সূচনাকালে সে একজন সামরিক নেতা হিসাবেই পরিচিত ছিল। তবে লোকদের সামনে ধীরে ধীরে তার আসল রূপ প্রকাশ হতে থাকে।

১৯১৮ সালের ১৩ নভেম্বর তুরস্কে ফরাসি বাহিনী, ইতালি ও গ্রিসের যৌথ পরিকল্পনায় এক ভয়াবহ গণহত্যার মত নৃশংসতা চালায়। ফলে তৎকালীন সুলতান এই ইউরোপীয় আগ্রাসনের সম্পূর্ণ দায় "কমিটি অব ইউনিয়ন এ্যান্ড প্রোগ্রেস"র উপর চাপিয়ে দেয়। কিন্তু তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করা আতাতুর্ক তখন সুলতানের স্পষ্ট বিরোধিতা করে বিদ্রোহের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে। 

জাতীয়তাবাদী মনোভাব ব্যক্ত করে সে খেলাফত বিরোধী তৎপরতাকে নিজস্ব লক্ষ্যে পরিণত করে। কিছুদিনের মধ্যেই তুরস্কে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তানজিমাতের প্রভাবে তখন আতাতুর্কের সমর্থিত জাতীয়তাবাদীরা সে নির্বাচনে গরিষ্ঠতা লাভ করে। সমগ্র তুরস্কে কমে যায় সুলতানের প্রভাব।

ইস্তাম্বুল ছিল তুরস্কের রাজধানী। আতাতুর্ক সে রাজধানী পরিবর্তিত করে তার আয়ত্বাধীন আঙ্কারাকে রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করে। একচ্ছত্র ক্ষমতায়নে আবেদন হারায় খেলাফতের কার্যকারিতা। আতাতুর্ক তুরস্কের পার্লামেন্টে সভাপতির পদ গ্রহণ করে।

তুরস্কে প্রায় দু'বছর দ্বৈত শাসন চলে- ইস্তাম্বুলে সুলতানের খেলাফত ব্যবস্থানুযায়ী সরকার আর আঙ্কারায় গ্র্যান্ড ন্যাশনাল এসেম্বলির সরকার প্রতিষ্ঠিত ছিল। পরবর্তীতে ১৯২২ সালের ১লা নভেম্বর গ্র্যান্ড ন্যাশনাল এসেম্বলির দ্বৈত প্রশাসন নিয়ে দীর্ঘ অধিবেশনে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, দ্বৈত প্রশাসন অবসানকল্পে সালতানাতের উচ্ছেদ করা হলেও খেলাফত ব্যবস্থা বাকী থাকবে। 

তবে ধর্মীয় ক্ষমতা ব্যতীত খলীফার কোনো রাজনৈতিক, শাসনতান্ত্রিক ও সামাজিক কোনো ক্ষমতা থাকবে না। সেই অনুসারে "এসেম্বলি" সুলতান ষষ্ঠ মুহাম্মাদকে পদচ্যুত করে সালতানাত বিলুপ্তির ফরমান জারি করে।

১৯২২ সালে সালতানাত নিষিদ্ধকরণের মাধ্যমে প্রজাতন্ত্র ঘোষিত হওয়ার পর লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য আতাতুর্ক যেসব বাঁধা অনুভব করেছিল তার মধ্যে সর্ববৃহৎ বাঁধা ছিল খেলাফত ব্যবস্থা। বাঁধা নিরসনে ১৯২৪ সালে কামাল পাশা যখন খেলাফত বিলুপ্তির প্রস্তাব উত্থাপন করে তখন সে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বহু চাপের মধ্যে পড়ে। কিন্তু বিদ্বেষের প্রগাঢ়তার কারণে সমস্ত বাধাকে তুচ্ছ করে গ্র্যান্ড ন্যাশনাল এসেম্বলি ১৯২৪ সালের ৩ মার্চ খেলাফত বিলুপ্তির ঘোষণা করে।

ফলে সাড়ে ছয়শত বছরের উসমানী খেলাফতের আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্ত হয়ে যায় ইসলাম বিদ্বেষের ঘৃণ্য মানসিকতা নিয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠা আতাতুর্কের হাতে।

উপসংহার:

তুর্কিদের হয়তো ভাবনাতেই ছিল না এমন একজন নেতার হাত দিয়ে সংস্কারের নামে খেলাফত ও ইসলামি সংস্কৃতির কবর রচিত হয়ে যাবে। ইউরোপীয় সংস্কৃতির আদলে হোক কিংবা ফরাসি বিপ্লবের প্রভাবে হোক, তাদের অধিকাংশই চেয়েছিল খেলাফতের সংস্কার কিংবা খেলাফত না হলেও অন্তত চেয়েছিল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা। কিন্তু ভাগ্যের চাকা ঘুরে গেছে ভিন্ন দিকে। খেলাফত বিলুপ্ত হয়ে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে একনায়কতন্ত্র। একনাগাড়ে ছাব্বিশটি বছর ধরে তুরস্কের মানুষকে সহ্য করতে হয়েছে একদলীয় শাসন ব্যবস্থার যাতনা। নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় অন্যান্য সকল রাজনৈতিক সংগঠন। শাসন বিভাগে প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে প্রতিটি বিভাগ পরিচালিত হতে থাকে আতাতুর্কের নিজস্বপার্টি সিএইচপির মাধ্যমেই। 

মোস্তফা কামাল নিজের একমাত্র লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করে - যেকোনো মূল্যে তুরস্ক থেকে উসমানী সালতানাতের নাম-নিশানা মুছে দিতে হবে। মুসলিম জাতিসত্তার পরিচয়কে ভুলুন্ঠিত করে প্রতিষ্ঠা করতে হবে সেক্যুলারিজম চিন্তায় পূর্ণ অন্য এক তুরস্ক। লক্ষ বাস্তবায়নে যাবতীয় ধর্মীয় পোশাক নিষেধ করা হয়। নির্দেশ করা হয় আধুনিক পোশাক পরিধানের। ১৯২৫ সালের কাস্তাননু বক্তৃতায় আতাতুর্ক পর্দা প্রথাকে সভ্য জাতির জন্য অপমান কর প্রথা হিসেবে উল্লেখ করে। 

১৯২৮ সালের এপ্রিলে সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব তুলে কামাল পাশা। জনসংখ্যার প্রায় শতভাগ মুসলমান হওয়ার পরও বাতিল করা হয় রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে। আরবি ভাষায় কোরআন পাঠ এবং আজান নিষিদ্ধ করে তুর্কি ভাষায় উচ্চারণের আদেশ দেওয়া হয়।

তবে আপামর জনতার ভালোবাসাকে পুঁজি করে ক্ষমতার অপব্যবহারকারী মুস্তফা কামাল ও তার অনুসারীরা তুরস্কে বেশি দিন টিকে থাকতে পারেনি। ক্ষমতায় যাওয়ার বারোতম বছর অত্যাধিক মদ্যপানের কারণে হার্ট অ্যাটাক করে মারা যায়। আর মৃত্যুর পর সিএইচপি প্রশাসন পরিচালিত একদলীয় শাসনব্যবস্থার সমাপ্তি হয় ১৯৪৪ সালে। পরবর্তীতে ১৯৫৭ সালে ক্ষমতায় আসেন আদনান মেন্দেরেস। হলে প্রথমবারের মতো একটি গণতান্ত্রিক দলের অধীনে পরিচালিত হয় তুরস্ক।

খেলাফত বিলুপ্তের পর তুর্কি জনগোষ্ঠী আর কখনো ভাবিনি যে তাদের মসজিদগুলো আল্লাহু আকবারের ধ্বনিতে মুখরিত হবে। মুখরিত হবে তুরস্ক। সুন্নাহ অনুযায়ী তাদের দাড়ি রাখার সুযোগ হবে। মাথায় তুলে নিতে পারবে পাগড়ী। 

আর খেলাফতের চিন্তা তো অলীক চিন্তা। কিন্তু ইসলামের প্রান সত্তাকে কেউ কখনো দাবিয়ে রাখতে পারেনি। তুরস্কের ইসলামপ্রিয়তা বারেবারেই ফিনিক্স পাখির মত ডানা মেলেছে। খাঁদের কিনারে দাঁড়িয়ে কোন না কোন মোয়াজ্জিন দরাজ কন্ঠে দিয়েছে হকের আওয়াজ। যদিও ফিরে যেতে পারেনি ওসমানী খেলাফতের সোনালী সময়ে। কিন্তু ক্ষণিকের বিরতি ভেঙ্গে সেই লক্ষ্যে ছুটে চলেছে ওসমানী ঘোড়া। সে চায় আবারো ফিরে আসুক মুসলিমদের সেই সোনারাঙা অতীত। 

Rate This Article

Thanks for reading: অটোমান সাম্রাজ্য ধ্বংসের কারণ। উসমানী সাম্রাজ্যের উত্থান ও পতন। Alfamito Blog , Sorry, my English is bad:)

Getting Info...

Post a Comment

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.