বই পড়ার গুরুত্ব, কিভাবে বই পড়তে হয় এবং কী বই পড়ব। Alfamito Blog

বই পড়ার গুরুত্ব, কিভাবে বই পড়বো, কী বই পড়ব। Importace of Reading Books, how to read a book, What book you read? Alfamito Blog
Alfamito Blog
সূচিপত্র

শিক্ষা জাতির অলংকার। উন্নতি, অগ্রগতি ও প্রতিষ্ঠার বুনিয়াদ শিক্ষা। বিশেষ করে আমাদের গর্বের ধর্ম ইসলামে শিক্ষার মূল্য অন্তহীন যদি বলি ইসলামের প্রথম ইটই শিক্ষা তাহলেও বাড়িয়ে বলা হবে না। শিক্ষা (তথা পঠন ও লিখন) আর ইসলাম গলাগলি করে পথ চলছে। মানবকে এগিয়ে দিচ্ছে চরম অন্ধকার থেকে অসীম আলোর দিকে।

বই পড়ার গুরুত্ব, কিভাবে বই পড়তে হয়

ইসলামে আজ অবধি পঠন-লিখন, শান্তি ও ধর্ম প্রবাহিত হচ্ছে এক সরল পথে, আর এ পথেই একদা মানবসমাজে প্রবাদ প্রচলিত হয়েছে "শিক্ষা শান্তি প্রগতি" এ শিক্ষাকে মানুষ সভ্যতার ভিত্তি, সম্মানের স্তম্ভ এবং প্রতিষ্ঠার স্বপন হিসাবে বরণ করে নিয়েছে।শিক্ষার দ্বিতীয়ার্ধ তথা লিখনের মাধ্যম যন্ত্র হলো কলম। কলমের স্বপ্ন মাখা মুখ এবং বর্ণনার রস পেয়েছিল আমাদের নবীজির জীবনে এসে। সভ্যতা, দর্শন, আদর্শ ও সফলতার শাশ্বত বাণী পবিত্র কুরআন ও অবিকৃত ও সংরক্ষিত থাকার গর্ব ও গৌরব ইসলামের এবং মুসলমানদের এই গর্ব ও গৌরবের শিকড়ে রয়েছে কলমের কালি।

কলম ও কণ্ঠ উভয়টির কৃতিত্বই সকল যোগে সকল সভ্য সমাজে ছিল সদারিত। তবে দুটির মাঝে তফাৎ হল, কন্ঠের বাণী যত শাণিত ও শক্তিমানই হোক বাতাসের কোমল গতরে আবেদনের বিদ্যুৎ ছড়িয়ে মুহূর্তে মিলিয়ে যায়। কিন্তু কলমের দাগ আলোকরেখা হয়ে মানব সমাজকে পথ দেখায় কালের পরকাল। তাই কোন সমাজ ও জাতিকে সম্মান ও গৌরব প্রতিষ্ঠায় বুক টান কয দাঁড়াতে হলে আসতে হয় এই কলমের ছায়ায়।

আর হ্যাঁ যেমনিভাবে ভবনের প্রথম তলা অতিক্রম ব্যতিরেখে দ্বিতীয় তলায় আরোহন অভাবনীয় ঠিক তেমনি শিক্ষার প্রথমার্ধ (তথা পঠন বা অধ্যায়ন) ব্যতীত দ্বিতীয়ার্ধ (তথা লিখন বা কলম চালনা) অকল্পনীয়।তাহলে করনীয় ও পদ্ধতি!!

বই পড়ার গুরুত্ব

জীবন্ত কিংবদন্তি মুহাম্মদ জয়নুল আবেদীন সাহেব বলেন। লেখক হওয়ার মন্ত্র তিনটি "স্বপ্ন, পাঠ ও অনুশীলন" লক্ষ্য করলে স্পষ্ট বুঝা যায় লেখক মাত্রই পাঠক হওয়া শর্ত তবে স্বস্তির বিষয় হলো পাঠক মাত্রই লেখক হওয়া আবশ্যক নয় কিন্তু মানুষমাত্রই পাঠ করা অতীব জরুরী। কেননা যে ব্যক্তি যে বিষয়ে কিছুই জানে না, তাকে সেক্ষেত্রে মূল্যায়ন তো পরের কথা বরং ভ্রুক্ষেপই করা হয় না।

আপনি কোন পরিবারের কর্তা বা সদস্য! আপনাকে জানতে হবে নিজ অবস্থানের করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়াবলীর ধর্মীয় ও সামাজিক পদ্ধতি। আপনি কোন সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পরিচালনা বা যেকোনোভাবে সম্পৃক্ত! তাহলে ধর্মীয় ও সামাজিকতার পাশাপাশি ইতিহাস থেকে আপনার অবস্থান, করণীয় ও বর্জনীয় জানতে হবে। আরেকটু উপর হলে আপনার বিচরণ! তাহলে পূর্বের বিষয়াবলীর সঙ্গে দেশীয় ও বৈশ্বিক হালচাল, রাজনীতি ইত্যাদি জানার বিকল্প নেই। আপনি কন্ঠে বা কলমে কোন বক্তব্য পেশ করবেন তাহলে আরেকটু অতিরক্ত জানাটাই কাম্য। তাহলো সাহিত্য!!!

এখন কথা হল এসব বিষয়ে তো এমনি এমনি অর্জন  হবে না। তাহলে সেগুলো জানার উপায় একটাই পাঠ, পাঠ এবং পাঠ।

কিভাবে বই পড়তে হয়

এখানে পড়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ দশটি পদ্ধতি উপস্থাপন করা হলো নিঃসন্দেহে এগুলো পড়ার প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টিতে সাহায্য করবে পড়াকে করে তুলবে সবচেয়ে প্রিয় ও উদ্দীপনা পূর্ণ। 

১. লক্ষের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখা

পরার ক্ষেত্রে আপনার লক্ষ্য কি, কেন পড়বেন, সেই লক্ষ টা স্মরণ রাখা।

আমি পড়বো কারণ আমি দুনিয়া ও আখিরাতে উপকৃত হতে চাই দুনিয়াতে যেমন কোনো সফলতা নেই এলেম ও জ্ঞান ছাড়া। তেমনি কোন সফলতা নেই আখেরাতেও।

আমি আমার চারপাশের মানুষকে উপকৃত করতে চাই আমার বাবা মা ও সন্তানকে। আমি উপকৃত করতে চাই আমার ভাই বোন স্বজন ও বন্ধুদের।উপকার করতে চাই যাকে চিনি তাকে এবং যাকে চিনি না তাকেও। আমি হতে চাই "মেশক-আতর" বহনকারীর মত- পাশ দিয়ে যে-ই যাবে আমি আমার সৌরভ দিয়ে তাকে উপকৃত ও আনন্দিত করতে চাই।

২. পড়ার পরিমাণ নির্ধারণ করা

 নিজের লক্ষ্য যদি নির্ধারিত হয়ে যায় তখন আর এলোমেলোভাবে পড়ার কোন সুযোগ থাকে না। তবে গোছানোভাবে পড়তে চাইলে পড়ার জন্য একটি সুস্পষ্ট পরিমাণ নির্ধারণ করে নেওয়া প্রয়োজন।যেমন আমি এই পাঁচটি বই আগামী ছয় মাসের মধ্যে পড়ে শেষ করব, কিংবা এই বিশটি বই আগামী এক বা দুই বছরের মধ্যে পড়ে শেষ করব এবং সেগুলোর মধ্যে পূর্ব-পরও নির্ধারণ করে নিতে হবে যে, এই বইটি আমি এই সময়ের মধ্যে শেষ করব। এরপর এটা,,, তারপর এটা,,,। আর এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আপনি নিজের জন্য যেই সময় নির্ধারণ করে নেবেন অতি আবশ্যিকভাবে সেটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করবেন।

৩. পড়ার সময় নির্ধারণ করা

পড়ার জন্য সময় নির্ধারণ করে নাও। অর্থাৎ তোমার যা পড়তে হবে তা পড়ার জন্য দিনের শেষের দিকে চেয়ে থাকবে না। বরং পড়ার ক্ষেত্রে নিজের জন্য একটা নির্ধারিত সময় বের করে নাও। আর এই নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হবে। পড়ার জন্য তুমি এমন সময় নির্ধারণের চেষ্টা করো- যখন তোমার মস্তিষ্ক থাকে সতেজ সজীব এবং তুমিও থাকো নির্ভার সুস্থির। এতে করে পড়ার মধ্যে তোমার সকল মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে পারবে এবং এর দ্বারা সুন্দর কিছু অর্জন তোমার জীবনে যুক্ত হবে।

৪. পরিমিত ধীরতা

পড়াশোনার গুরুত্ব ও পদ্ধতি নিয়ে এতক্ষণ যে আলোচনা করা হলো, এগুলো পড়ে কেউ কেউ নিশ্চয় পড়ার প্রতি ভীষণভাবে উদ্দীপিত হবে। ছলকে উঠবে তার হিম্মত ও প্রত্যয়। হয়তো অমিত আবেগে উদ্বেলিত হয়ে বহু বই কিনে এনে গোগ্রাসে গিলতে থাকবে। পড়ার জন্য দীর্ঘ দীর্ঘ সময় বের করে নেবে... বরং এমনও হতে পারে যে, তার এই বুভুক্ষু পাঠ জীবনের অন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজের সময় দখল করে নেবে....

এমন কোনো পাঠকের ক্ষেত্রে আমি বলি, বন্ধু! একটু ধীরে... একটু রয়ে সয়ে...। এ পথ বড় কঠিন ও অমসৃণ, এখানে প্রতিটি পদক্ষেপ হবে বিচক্ষণার সাথে। বিশেষ করে তুমি যদি পড়ার ব্যাপারে আগে থেকে তেমন অভ্যস্ত না হয়ে থাকো; তবে এমনটি করো না। এতটা ব্যগ্র হয়ে ওঠো না। নতুবা খুব দ্রুতই ক্লান্ত হয়ে পড়বে। হয়তো একেবারে পড়াশোনাই ছেড়ে দেবে ।

৫. একাগ্রতা

শুরুর দিকে আমরা উল্লেখ করেছি, পড়া কোনো শখের বিষয় নয়। এটা অনেক কষ্ট ও পরিশ্রমের কাজ। এটার জন্য দরকার হয় মেধা, বুদ্ধি ও চিন্তা এবং সম্পদ, শ্রম ও নিজেকে উৎসর্গ করা। এটাকে খুবই ধৈর্য, স্থৈর্য ও আন্তরিকতার সাথে গ্রহণ করা প্রয়োজন। আপনি যখন কোনো বই পড়বেন, তার প্রতিটি শব্দ-বাক্য সম্পূর্ণভাবে বুঝে বুঝে পড়বেন। এমনভাবে পড়বেন, যাতে এর দ্বারা নিজেও উপকৃত হতে পারেন এবং অন্যকেও উপকৃত করতে পারেন। পড়া একটি অতি মহৎ কর্ম— তবে এক্ষেত্রে যতটুকু আপনি বুঝবেন, ততটুকুই শুধু আপনার অর্জন- অন্যথায় তা হবে শুধুই কালো কালো অক্ষরের দিকে তাকিয়ে থাকা, কেবলমাত্র সময় নষ্ট করা। 

 ৬. নিয়ম ও শৃঙ্খলা

জগৎ ও জীবনের প্রত্যেক বিষয়েই নিয়মানুবর্তিতা ও শৃঙ্খলা অতি উচ্চমানের দুটো গুণ। আপনিও চেষ্টা করেন- আপনার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিয়মানুবর্তী ও পরিপাটি হওয়ার। সচেতন সজাগ দৃষ্টির সাথে কিছু পড়ার পর আপনি যখন আপনার বিশেষ খাতায় অধীত বিষয়গুলো লিখে রাখবেন, সেগুলো এলোমেলোভাবে লিখবেন না। মুসলমান তার প্রতিটি কাজেই হবে নিয়মানুবর্তী এবং সুশৃঙ্খল ।

আপনার কিছু বিশেষ খাতা থাকবে- পড়ার ফাঁকে ফাঁকে যার একটিতে আপনি হয়তো ধর্মীয় বিষয়ে লিখবেন, অন্যটিতে লিখবেন রাজনীতি বিষয়ে, আর তৃতীয় আরেকটিতে লিখে রাখবেন হয়তো সাহিত্য বিষয়ে। চতুর্থটিতে লিখবেন ইতিহাস নিয়ে- এমনি আরও আরও বিষয়ের জন্য আরও আরও খাতা রাখবেন...।

৭. পারিবারিক লাইব্রেরি করা

একটি পারিবারিক লাইব্রেরির গুরুত্ব অনেক। 'সভ্যতার এক সোনালি বাহন' হলো এই পারিবারিক লাইব্রেরি। একটি লাইব্রেরি একটি জগৎ। অনেক কিছু বোঝায়। অনেক কিছু ঘটায়।

এটাকে আপনি আপনার জীবনের বিভিন্ন পরিকল্পনার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রকল্প হিসেবে গ্রহণ করে নিন। যেমন, কোনো দম্পতি পরিকল্পনা করে- তাদের একটি বেডরুম হবে, একটি ড্রয়িংরুম, একটি....। তাদের এসব পরিকল্পনার সাথে অবশ্যই তাদের এটাও চিন্তা করতে হবে- তাদের জন্য যেন বাসায় একটি রিডিংরুম বা লাইব্রেরি থাকে। এটা কিছুতেই কোনো দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ নয়- নিছক লৌকিকতা বা আলগা আভিজাত্যের প্রকাশও নয়, বরং এটা একটি বাড়ির মৌলিক বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত একটি বিষয়।

লাইব্রেরিটি অনেক বিশাল এবং জৌলুশময় হতে হবে কিংবা নির্ধারিত বিষয়ের সকল বই সেখানে বিদ্যমান থাকতে হবে- এটা কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- সেখানে কত ধরনের বই রয়েছে। এ কারণে আপনার মাথায় বই ক্রয়ের ক্ষেত্রে স্পষ্ট পরিকল্পনা থাকতে হবে। বিশেষ করে রচনাসমগ্রগুলো কেনার চেষ্টা করবেন। 

৮. পঠিত বিষয় অন্যের কাছে উপস্থাপন করা

 মানুষের কর্তব্য হলো, সে নিজে যা শিখেছে, অন্যকে তা শেখাবে। নিজে যা জেনেছে, অন্যকে তা জানাবে। এর মধ্যে অনেক উপকার ও কল্যাণ নিহিত রয়েছে। যথা :

  1. অধীত জ্ঞান আরও ভালোভাবে মাথায় বসে যাবে।
  2. তার শিক্ষা ও জ্ঞান দ্বারা অন্যকে উপকৃত করতে সক্ষম হবে।
  3. প্রথম শিক্ষাদাতা যে শিক্ষার্থীকে শিখিয়েছে- যে যখন অন্য কাউকে শেখাবে, তখন এর প্রতিদান বা সওয়াব প্রথম শিক্ষাদাতা পাবে- অথচ সেই শিক্ষার্থী থেকে কোনো সওয়াবের কমতি হবে না।
  4. তাছাড়া আল্লাহ তাআলা এর মাধ্যমে তার জ্ঞানভাণ্ডারে সমৃদ্ধি দান করবেন। 

৯. পড়ার ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা

পড়ার ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা একটি চমৎকার ফলপ্রসূ বিষয়। এর জন্য আপনি আপনার সাথি-বন্ধুদের নিয়ে একটি 'সাহিত্য আড্ডা'র মতো দল গঠন করে নিতে পারেন। তিনজন, চারজন, পাঁচজন কিংবা আরও কিছু বেশি....। এটা হবে শুধুই 'পড়ালেখার দল'। এ ব্যাপারে আগ্রহী ও উদ্যমীরাই শুধু এখানে একত্র হবে। আপনাদের প্রত্যেকেই এক একটি বিষয় নিয়ে পড়বে। এরপর সপ্তাহে একবার বা দুইবার কিংবা প্রতি দুই সপ্তাহে একবার... নিজেদের সুযোগ ও সামর্থ্য অনুযায়ী একত্রিত হবে। আপনাদের প্রত্যেকেই সে যা পড়েছে অন্যদের সামনে উপস্থাপন করবে। এভাবে খুবই ফলপ্রসূভাবে ও শৃঙ্খলার সাথে জ্ঞাত বিষয়গুলো নিজেদের মাঝে বিনিময় হয়ে যাবে। জ্ঞান ও চিন্তা-চেতনায় দ্রুত নিজেকে সমৃদ্ধকরণের এটি একটি অত্যন্ত কার্যকরী পদ্ধতি। এটাকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

একতাবদ্ধ জ্ঞানের দৃঢ়তা অনেক বেশি। একজন মানুষের দুটো চোখের অধীত জ্ঞানের শক্তি, কিছুতেই এই সমষ্টিগত বহু চোখের পঠিত জ্ঞানের শক্তির সমকক্ষ হয় না- হতে পারে না। একটা মাথার অনুধাবিত বিষয়ের দৃঢ়তা, কিছুতেই তিনটা কিংবা পাঁচটা মাথার অনুধাবিত বিষয়ের দৃঢ়তার সমকক্ষ হয় না- হতে পারে না।

১০. আলেমদের থেকে শেখা

৮ম পদ্ধতিটি ছিল- যারা জানে না, তুমি তাদেরকে জানাবে। ৯ম পদ্ধতিটি হলো, পড়ালেখার ব্যাপারে তুমি তোমার ভাই-বোন, সাথি-বন্ধুদের নিয়ে একে অন্যকে সহযোগিতা করবে। আর এখন ১০ম পদ্ধতিটি হলো- তুমি নিজে অন্যের থেকে শিক্ষা অর্জন করবে । শিক্ষা গ্রহণ করবে আলেমদের থেকে, বিভিন্ন বিষয়ের বিশেষজ্ঞদের থেকে।

তবে অবশ্যই আমাদের পূর্ববর্তীরা যেখানে এসে শেষ করেছেন, তুমি শুরু করবে সেখান থেকে। উদ্দিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের নিকট গিয়ে জেনে নেবে- তুমি কী পড়বে, কোন বই দিয়ে শুরু করবে, এই বিষয়ে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ বা ভালো বই কোনটি। যখন কোনো বিষয়ের একটি বই পঠিত হয়ে যাবে, জিজ্ঞাসা করবে এরপর কোনটি পড়বে... এমনি আরও বিভিন্ন বিষয়।

এই হলো দশটি পদ্ধতি । দৃঢ়ভাবে আশা করি- এগুলো তোমাকে এবং যেকোনো মুসলমানকে পড়ার প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে সক্ষম হবে। সাহায্য করবে পড়ার ওপর অটল থাকতে, মনোযোগী হতে এবং পড়ালেখা থেকে উপকৃত হতে। হ্যাঁ, এটা সত্য যে, উপস্থাপিত দশটি পদ্ধতি ছাড়াও আরও কিছু পদ্ধতি থাকতে পারে। কিন্তু আমরা এখানে প্রধান ও মৌলিক পদ্ধতিগুলো উপস্থাপন করেছি। একটি জীবনের জন্য এগুলোই যথেষ্ট । আল্লাহই সাহায্যকারী।

কী বই পড়ব

মনে করি, তুমি আগে থেকেই অনুপ্রাণিত ছিলে কিংবা উপরের আলোচনা ঘর তুমি ভীষণভাবে উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত হয়েছ । এখন পড়াকে তোমার জীবনের সঙ্গ বানানোর জন্য তুমি প্রস্তুত। পড়া তুমি শুরু করবেই...; এবং পড়ার ক্ষেত্রে তোমার যে লক্ষ্য তা তুমি সত্যায়িত করেই ছাড়বে। তোমার যে উৎসাহ উদ্যম ও প্রত্যয়- তা তোমাকে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে নিয়ে যাবেই যাবে। এখন শুধু শুরু করার অপেক্ষা মাত্র... । পড়া সূচনা করার এই সময়টাতে এসে স্বাভাবিকভাবেই তোমার মনের মধ্যে যে প্রশ্নটি জেগে উঠবে, তা হলো-

পড়াশোনার দশটি মৌলিক বিষয়-

আমি তোমাকে বলি, এসো, আমরা একসাথে চিন্তা-ভাবনা করে দেখি- কোন বিষয়গুলো পড়া যায়, কোন বিষয়গুলো আমাদের পড়া দরকার...।

দুনিয়াতে বিষয়-বৈচিত্রের অভাব নেই। কত বিষয় নিয়েই তো পড়া যায়। কত বিষয় নিয়েই তো মানুষ পড়ে! তবে এখানে আমরা বহু চিন্তা-ভাবনার পর পাঠ্য-বিষয় হিসেবে দশটি বিষয়কে নির্বাচন করেছি। আমাদের জন্য যা কিছু পড়া অপরিহার্য, তা এ দশটি বিষয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এটা হলো কেবল প্রাথমিক ধাপ। তবে মৌলিক বিষয়গুলো অনেকটাই এর মধ্যে চলে এসেছে। এরপর আল্লাহ তাআলা যার জন্য সহজ করে দেবেন, সে আরও পড়বে, আরও জানবে।

১ কুরআনুল কারিম

প্রথমে আমরা যা পড়ব... সর্বশ্রেষ্ঠ যা আমরা পড়ব... সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে শব্দ-বাক্য আমরা পড়ব- তা হলো কোরআনুল কারিম। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পবিত্র বাণী। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পাঠ্যবিষয়।

কোরআনুল কারিম নিছক এমন কোনো গ্রন্থ নয় যে, দু-একবার পড়ে রেখে দেওয়া হবে। কোরআনুল কারিম হলো, মানবকুলের জীবনযাপনের সংবিধান। তাই এটি পাঠ করতে হবে বারবার, পড়তে হবে অব্যাহতভাবে, পড়তে হবে জীবনের প্রধানতম একটি কাজ হিসেবে। এ জন্য আপনার দৈনন্দিন রুটিনে কোরআনের জন্য একটা বিশেষ অবস্থান থাকা অপরিহার্য।

২. হাদিসু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম

 দ্বিতীয় পাঠ্য বিষয় হবে হাদিস পাঠ এটাও আমাদের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু আমাদের বাস্তবতা হলো, এর অনেক গুরুত্ব থাকা সত্ত্বেও এবং কুরআনের পর এটা ইসলামি শরীয়তের দ্বিতীয় উৎস হওয়া সত্ত্বেও এদিকে আমরা গুরুত্ব খুব কমই দিয়েছি। আমাদের সামনে জ্ঞানের যত ভান্ডার রয়েছে এর মধ্যে হাদিস হলো একটি বড় ও গুরুত্বপূর্ণ ভান্ডার আলহামদুলিল্লাহ আমাদের সামনে হাদিসের অনেক কিতাব রয়েছে আপনি এর একটি ছোট পুস্তিকা দিয়েই শুরু করতে পারেন। ধীরে ধীরে হোক তবুও অব্যাহত থাকুক

  • ১. رياض الصالحين
  • ২. الاربعون النبويه
  • ৩. اللؤلؤ والمرجان فيما اتفقوا عليه شيخون
  • ৪. مختصر البخاري 
  • ৫. مختصر مسلم

৩. ধর্মের বিধি-বিধান 

পাঠের তৃতীয় বিষয় হবে ধর্মীয় বিধি-বিধান মাসআলা-মাসায়েল। বর্তমান সময়ের এবং পূর্ববর্তী আলেমদের থেকে এগুলো অর্জন করতে হবে। গ্রন্থ থেকে এবং ব্যক্তি থেকে শিখতে হবে। ইসলামী শরীয়তের জ্ঞানগুলো সুষ্ঠুভাবে অর্জন করার ক্ষেত্রে আপনি একটি পরিকল্পনা তৈরি করে নিতে পারেন যেহেতু এই ভাণ্ডারটি অতি ব্যাপক ও বিস্তৃত। আপনি আপনার ইচ্ছামতো প্রতিটি বাগান থেকে এই সৌরভময় জ্ঞানের ফুল আহরণ করতে পারেন ।  প্রথমে কোনো ছোট পুস্তিকা দিয়েই শুরু করো; এরপর ধীরে ধীরে সময় ও মেধার পরিপক্বতার সাথে বড় ও বিস্তৃত কিতাব পাঠের দিকে ধাবিত হবে।

এখানে কিছু কিতাবের তালিকা প্রদান করা হচ্ছে। আশা করি, এগুলো অধ্যয়নের মাধ্যমে ইসলামের মৌলিক বিধি-বিধান সম্পর্কে তোমার একটি শক্তিশালী ভিত্তি দাঁড়িয়ে যাবে ।

 ১. مختصر تفسير ابن كثير (সংক্ষিপ্ত তাফসিরে ইবনে কাসির)
কোরানুল কারীমের তাফসিরের ক্ষেত্রে এ হলো একটি মহামূল্যবান গ্রন্থ।

২. اعلاء السنن

এর প্রথম অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে নামাজ, জাকাত, রোজা ও হজের বিধানাবলি সম্পর্কে। আল্লাহ তাআলা যেভাবে এই ইবাদতগুলো পালন করার আদেশ করেছেন, ইবাদতগুলো সেভাবে আদায় করার জন্য এই কিতাবটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

৩. كتاب الايمان (কিতাবুল ঈমান) 

এই গ্রন্থটির লেখক ড. মুহাম্মদ নাইম ইয়াসিন। ইসলামি আকিদা বিষয়ে এটি খুবই সহজ ও বিস্তৃত একটি কিতাব। সম্মানিত লেখক এখানে অতি চমৎকারভাবে আল্লাহ, ফেরেশতা, কিতাব, রাসুল এবং আখেরাত বিষয়ে ইমানের ধরন ও অবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। আল্লাহর নির্ধারণ ও তাকদিরের প্রতি ইমান আনার ধরন ও অবস্থা সম্পর্কেও বর্ণনা দিয়েছেন।

৪. مختصر منهاج القاصدين (সংক্ষিপ্ত মিনহাজুল কাসিদিন)

হৃদয়ের বিশেষ অবস্থা, আধ্যাত্মিকতা, অন্তরের রোগ এবং সেগুলোর নিরাময়ের ধরন সম্পর্কে অতি চমৎকার ও উপকারী একটি কিতাব। 

সে সম্পর্কে। আবারও বলি, বাস্তবেই এটি একটি সুন্দর ও উপকারী কিতাব। 

৫. كتابه خلق المسلم (মুসলমানের চরিত্র)

বইটির লেখক ইসলামি ইতিহাসের বিখ্যাত সংস্কারক ও তুলনাহীন দার্শনিক ইমাম গাজালি রহমাতুল্লাহি আলাইহি। প্রতিটি মুমিনের জন্য মৌলিক চরিত্র বা চারিত্রিক গুণাবলি বোঝার ক্ষেত্রে এটি একটি অসাধারণ কিতাব।

৬. المراه في التصور الاسلامي (ইসলামি সমাজ পরিকল্পনায় নারীর অবস্থান)

 বইটির লেখক ড. আবদুল মুতাআল আল জাবরি রহমাতুল্লাহি আলাইহি। এতে খুবই চমৎকার ও বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে ইসলামে নারীর মর্যাদা ও ভূমিকা বিষয়ে এবং এ বিষয়ে ইসলাম সম্পর্কে যে সকল সন্দেহ ও বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়- সেগুলোর উত্তরও দিয়েছেন অতি চমৎকারভাবে। নারী বিষয়ে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও শক্তিশালী একটা বই। তাছাড়া এটা শুধু মহিলাদের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়; পুরুষদের জন্যও এর গুরুত্ব সমানভাবে প্রযোজ্য ।

এখানে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু কিতাবের উদাহরণ প্রদান করা হলো। নিঃসন্দেহে এ ব্যাপারে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিতাব রয়েছে। সেগুলোও পড়া যেতে পারে। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো- তোমার পড়তে শুরু করা।

আবার স্মরণ করিয়ে দিই— কোরআন ও হাদিসের পর তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ পাঠ্যবিষয় হলো ধর্মীয় জ্ঞান বা বিধি-বিধান অধ্যয়ন।

৪. পাঠ্যবিষয়ে বিশেষজ্ঞতা অর্জন

শিক্ষাজগতের একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞতা অর্জন করা একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নির্দিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞতা অর্জনের বিকল্প নেই- হোক ধর্মীয় বিষয় কিংবা পার্থিব বিষয় । এর জন্য পড়াকে অব্যাহত রাখা জরুরি।

কেউ যদি পার্থিব কোনো বিষয়েও বিশেষজ্ঞতা অর্জন করতে চায়- তাহলেও তাকে সে বিষয়ে ব্যাপক পড়াশোনা করতে হবে। একজন চিকিৎসককে অবশ্যই তার চিকিৎসা বিষয়ে গভীর পড়াশোনা করতে হবে। একজন ইঞ্জিনিয়ার বা প্রকৌশলী নিশ্চয় তার ইঞ্জিনিয়ারিং বা প্রকৌশল বিদ্যা সম্পর্কে পড়াশোনা করবেন। একজন পদার্থবিদকে পড়তে হবে তার পদার্থবিদ্যা সম্পর্কে। একজন ভূগোলবিদ পড়বেন ভৌগোলিক বিদ্যা..... এভাবে সকলেই তার নিজের বিষয়ে বিশেষজ্ঞতা অর্জন করবেন বা করতে হয়।

৫. ইতিহাস পাঠ 

উত্থান-পতনই এই পৃথিবীর জীবনছন্দ। যুদ্ধে পরাজয় কোনো বীরের জন্য সাময়িক অপমান হতে পারে, আবার সেটাই হতে পারে তার জাতির জন্য বিজয়ের পাঠ ও পাঠশালা। যেকোনো সভ্য জাতির জন্য ইতিহাস-ঘনিষ্ঠতার এবং ইতিহাস মুখিতার রহস্যও হয়তো এটা। তাই যে জাতি তার পিছনের ইতিহাস সংরক্ষণ করে না, পড়ে না, চর্চা করে না সে জাতি কোনদিন বুকটান করে দাঁড়াতে পারে না এ কারণেই আমাদের পূর্বসূরী মনীষীগণ শত্রুর কয়খানায় বসেও জিহাদের দাস্তান লিখতে ভোলেননি। কয়লার কালিতে, কাফনের কাপড়ে ইতিহাস লেখার ইতিহাস তো আমাদেরই। তবে সেগুলোর মূল্যায়ন তখনই হবে যখন আমরা তা জানতে পারবো। আর জানতে প্রয়োজন প্রচুর পরিমাণে পাঠ করা। তাই প্রাথমিক সামান্য তালিকা এখানে আনা হলো।

৬. বিশ্বের বিভিন্ন চলমান ঘটনা পাঠ

এই বিষয়টিও অনেক গুরুত্বের দাবি রাখে। বরং বর্তমান সময়ে একজন সচেতন ও সুসভ্য মুসলমানের জন্য এটি অপরিহার্য বিষয় বলা যেতে পারে। ঘটমান ঘটনা বলতে আমি বোঝাতে চাই- আমরা ঠিক যেই সময়টাতে অবস্থান করছি, সেই সময়ের চারপাশের ঘটিত বিষয় ও তার কারণগুলো। যেমন:- বর্তমান রাজনীতি, অর্থনীতি এবং জ্ঞান ও বিজ্ঞান। এগুলো হতে পারে তোমার নিজের দেশের, মুসলিম-বিশ্বের এবং সামগ্রিকভাবে পুরো বিশ্বের সকল বিষয়ে মৌলিকভাবে খোঁজ-খবর রাখা ।

আজকের পৃথিবীর পরিবর্তিত যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি- নিশ্চয় এটা মুসলিম উম্মাহর ওপরও বিরাট প্রভাব রাখে। তুমি নিজেও যখন মুসলিম উম্মাহর সার্বিক

গঠনে ও উন্নয়নে কাজ করতে চাও, তাহলে তোমাকে জানতেই হবে- তোমার দেশ ও চারপাশের পৃথিবীতে ঘটিত ঘটনাগুলো। জানতে হবে নেপথ্য কারণগুলোও...।

 রাজনীতি, অর্থনীতি, বাণিজ্যনীতি, কৃষি, যুদ্ধ এবং বিভিন্ন বৈশ্বিক ও দেশীয় চুক্তি- এগুলোর কোনোটিই ইসলামের কর্ম-আওতার বাইরে নয়। নিশ্চয় এগুলোর মধ্যে ইসলামের দিকনির্দেশনা রয়েছে। এগুলো কীভাবে সম্পাদিত হবে বা হওয়া উচিত- নিশ্চয় ইসলামে তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা রয়েছে।

 সংবাদ জানার জন্য তুমি প্রতিদিনের দৈনিকে দ্রুত একবার চোখ বুলিয়ে নেবে। খবরগুলো সংক্ষেপে জেনে নেবে। সরকারি বা বিরোধী দলীয় সংবাদপত্রগুলোও দেখে নেবে। খবরগুলো হতে পারে শহরের, গ্রামের, হতে পারে ইসলামের কিংবা ইসলামের বাইরের। আর বৈশ্বিক ঘটমান ঘটনাগুলো জানার জন্য তুমি শুনতে পারো BBC ও CNN। কিন্তু এক্ষেত্রে অবশ্যই তাদের ঐচ্ছিক কিংবা অজ্ঞতাপূর্ণ বিভ্রান্তিগুলো থেকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, এ ব্যাপারে সর্বদা সজাগ থাকতে হবে। বিভিন্ন সময় সাম্প্রতিক বিষয়ে উপস্থিত শ্রোতাদের নিয়ে তাদের অনেক রকম প্রোগ্রাম হয়। সেসকল প্রোগ্রাম ও অনুষ্ঠানে শরিক হওয়ার চেষ্টা করতে পারো।

৭. অন্যদের মত-অভিমত ও মন্তব্যগুলো পড়া

খুবই আফসোসের কথা যে, আমাদের অনেকেই অন্যের মত বা মতামত পড়তে বা শুনতে প্রস্তুত নন। তিনি যে চিন্তাধারার সঙ্গে সম্পৃক্ত, এর বাইরে কোনো মুসলমান পণ্ডিতের লেখা পড়া ও কথা শোনার জন্যও প্রস্তুত নন। অন্যরা কী বলে, সেগুলোও আমাদের পড়া প্রয়োজন। আমাদের জানতে হবে- তাদের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন, তাদের মতগুলো কী এবং এক্ষেত্রে তাদের যুক্তিগুলোই বা কী, নিজের চিন্তায় নিজেকে পরিশুদ্ধ ভেবে সংকীর্ণ হয়ে বসে থাকা ঠিক নয়।

৮. ইসলাম সম্পর্কে অপপ্রচার এবং প্রতিরোধ

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুয়তপ্রাপ্তির পর থেকে আজ ইসলামের নামে কত অপপ্রচার যে চালানো হয়েছে... ইসলামের ব্যাপাে সন্দেহ যে সৃষ্টি করা হয়েছে- তার কোনো সীমা-পরিসীমা নেই।

আমরা তো জানি ও বিশ্বাস করি এবং দৃঢ়তা রাখি- ইসলাম একটি পরিপূ বা ধর্ম, এর মধ্যে কোনো দোষ-ত্রুটি বা ভুল নেই। কেননা, এটি প্রদান হয়েছে সমস্ত জাহানের প্রতিপালক, রক্ষক ও সৃষ্টিকারী মহান আল্লাহ তা পক্ষ থেকে। কিন্তু অনেক সময় আমরা অন্যদের ইসলাম সম্পর্কে বিভিন্ন ও অভিযোগগুলোর সন্তুষ্টিমূলক এবং তৃপ্তিদায়ক উত্তর দিতে সক্ষম হই তাছাড়া আমরা নিজেরাই তো আমাদের চারপাশের কত সত্য ও বা সম্পর্কে অতি অজ্ঞ- অথচ আমরা এর মাঝেই রয়েছি, এর ওপরই চলেছি।

 অতীতের তুলনায় বর্তমানে আমাদের মহান ধর্ম বা ইসলামের ব্যাপারে অন সন্দেহ সৃষ্টির পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে... এ জন্য বহু ষড়যন্ত্রকারী এ সংগঠিত হয়েছে, প্রচুর সম্পদ খরচ করছে, বহু শক্তি ও ক্ষমতা জমা ক তাই অতীতের তুলনায় আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যও অনেক বেড়ে ে আমাদের অপরিহার্য কর্তব্য হবে- এই সন্দেহ ও অভিযোগগুলোর প্রত্যুত্তর। করা। পাল্টা যুক্তির মাধ্যমে তাদের যুক্তিগুলো খণ্ডন করা। প্রশ্নের ওপর ধরা আরও কিছু পাল্টা প্রশ্ন...

এই বিষয়ে আমরা সাহায্য নিতে পারি শাইখ মুহাম্মদ কুতুব লিখিত شبهات حول الاسلام -(‘ইসলাম সম্পর্কে আরোপিত সন্দেহসমূহ') কিতাবটি এরপর পড়তে পারি حقائق الاسلام واباطل خصومه (ইসলামের অধিকার ও তার সম্পর্কে মিথ্যা অভিযোগ ।)

আরও পড়া যায় ড. শাওকি আবু খলিল লিখিত الاسلام في قفص الاتهام (ইসলামের ওপর আরোপিত আপত্তি।)

এগুলো ছাড়াও এ ব্যাপারে আরও অনেক লেখকের সুন্দর সুন্দ ব্যাপক জানাশোনার জন্য সেগুলোও পড়া যেতে পারে । 

৯. শিশুবিষয়ক লেখা পাঠ

আমাদের অনেকেই হয়তো ভাবিই না-বাচ্চাদের লালন-পাল নিয়ম ও পদ্ধতি রয়েছে। তাদেরকে সুন্দর জীবনের দিকে পরি আমাদের বিশেষভাবে ভাবার ও যত্ন নেওয়ার প্রয়োজন রয়ে আমাদের আগামী প্রজন্ম- অনাগত ভবিষ্যৎ।

বাচ্চাদের গঠন-লালন সম্পর্কে অনেক কিতাবই পাওয়া যায়। নাসেহ উলওয়ান লিখিত - تربيه الاولاد في الاسلام । এছাড়াও আরো অনেক অভিজ্ঞ লেখক বাচ্চাকাচ্চা লালন-পালন সম্পর্কে বই লিখেছেন। সেগু পারি। তারা লিখেছেন- বাচ্চাদের বিভিন্ন মানসিকতা, তা চাহিদা সম্পর্কে। তাদের মানসিক বিকাশ ও গঠন সম্পর্কে। এছাড়া ‘বাচ্চাদের ঘটনা'-জাতীয় লেখাগুলোও আমাদের পড়া উচিত। যাতে করে আমরা আমাদের মজলিসে, মসজিদে এবং বাড়িে প্রভাবসৃষ্টিকারী ঘটনাগুলো উপস্থাপন করতে পারি। তাদের নিক কাহিনি উপস্থাপন করি- যা তাদেরকে দীনি মজলিসে যেতে এবং বাড়িতে সুন্দর আচরণের সাথে চলতে উদ্বুদ্ধ করে।

আমরা বড়রাও যেন স্মরণে রাখি- আমাদের কল্পনার চেয়েও শিশুদের আকল ও বুদ্ধি অনেক বিস্তৃত ও কৌতূহলপ্রবণ। আমরা তাদের যা প্রদান করি, বলি, বোঝাই- তাদের অনুধাবন শক্তি এর চেয়ে আরও বহুগুণ বেশি। তাই মুসলমান শিশুদের মাথায় এমন কিছু প্রবেশ করানো ঠিক নয়- যেগুলো চারিত্রিকভাবে লোভী, কঠোর ও আগ্রাসী করে তোলে।

১০. চিত্ত বিনোদনমূলক পাঠ

 সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শেষে চিত্ত বিনোদনমূলক পড়া উদ্দেশ্যমূলক কোন পড়া নয়। ব্যক্তি মানুষ কর্মে কর্মে একসময় সত্যই ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তখন তার একটু অবকাশ আরাম ও বিশ্রামের প্রয়োজন। এ পড়াটি যেন তেমনই এক বিশ্রাম। তাই কোন মুসলিম যদি তার অবসরের কিছু সময় কোন বিনোদনমূলক কিংবা আনন্দদায়ক পড়ার মধ্যে কাটায়- এতে কোন অসুবিধা নেই সুন্দর কোন কবিতা পড়তে নিষেধ নেই।

পরিশেষে

এই হল দশটি পাঠ্য বিষয় এগুলোর মাধ্যমে আমরা আমাদের পড়াশোনার পথ চলা শুরু করতে পারি এই পথ অতি দীর্ঘ অতি কষ্টের তবে এর শেষ অতি সুন্দর, অতি মনোরম। এই পথে রয়েছে পরম আরামে চোখ বুঝে আসা ক্লান্তি, শেষের শান্তি,,,।

Rate This Article

Thanks for reading: বই পড়ার গুরুত্ব, কিভাবে বই পড়তে হয় এবং কী বই পড়ব। Alfamito Blog , Sorry, my English is bad:)

Getting Info...

Post a Comment

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.